'সাম্যবাদী' কবিতার আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। কবিতাটিতে কবি যেসব জাতি, ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মপ্রচারক ও ধর্মীয় স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন, তার তালিকা তৈরি করো।
জাতির নাম:
ধর্মের নাম:
ধর্মগ্রন্থের নাম:
ধর্মপ্রচারকের নাম:
ধর্মীয় স্থানের নাম:
২। 'সাম্যবাদী' কবিতায় কবি কী বলতে চেয়েছেন? কবির বক্তব্যের সঙ্গে তোমার মতের মিল-অমিল উল্লেখ করো।
৩। তোমার চারপাশের সমাজে মানুষে মানুষে কী কী ধরনের বিভেদ দেখা যায়? এসব বিভেদ কীভাবে দূর করা যায় বলে তুমি মনে করো?
১। 'সাম্যবাদী' কবিতার মূল বিষয়—মানবতা ও সাম্যবাদ। এখানে কবি ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষকে সমান চোখে দেখার কথা বলেছেন।
২। কবিতাটিতে প্রতি জোড়া চরণের শেষে মিল আছে। যেমন: গারো-আরো, হও-বও ইত্যাদি।
৩। কবিতাটি তালে তালে পড়া যায়। যেমন,
/গাহি /সাম্যের গান-
/যেখানে আসিয়া / এক হয়ে গেছে/সব বাধা-ব্যবধান
/যেখানে মিশেছে/হিন্দু-বৌদ্ধ-/মুসলিম-ক্রিশ্ / চান ।
/গাহি/ সাম্যের গান!
/কে তুমি?-পার্সি? / জৈন? ইহুদি? /সাঁওতাল, ভিল, /গারো?
/কনফুসিয়াস্? /চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো /আরো!
৪। কবিতাটির লয় মাঝারি; অর্থাৎ দ্রুতও নয়, ধীরও নয়।
৫। কবিতাটিতে শব্দরূপের কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: এসে-আসিয়া, বহন করো-বও, তোমার মধ্যে-তোমাতে, ত্যাগ করল—ত্যজিল, বসে-বসি ইত্যাদি।
৬। এই কবিতায় উপমার ব্যবহার আছে। যেমন: 'হৃদয়ের ধ্যান-গুহা'—এখানে হৃদয়কে গুহার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম 'সাঁঝের মায়া', 'মায়া কাজল', 'কেয়ার কাঁটা' ইত্যাদি। শিশুদের জন্য লেখা তাঁর একটি ছড়ার বই 'ইতল বিতল'। 'জাগো তবে অরণ্য কন্যারা' কবিতাটি সুফিয়া কামালের 'উদাত্ত পৃথিবী' কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।
মৌসুমি ফুলের গান মোর কণ্ঠে জাগে নাকো আর
চারিদিকে শুনি হাহাকার।
ফুলের ফসল নেই, নেই কারো কণ্ঠে আর গান
ক্ষুধার্ত ভয়ার্ত দৃষ্টি প্রাণহীন সব মুখ ম্লান।
মাটি অরণ্যের পানে চায়
সেখানে ক্ষরিছে স্নেহ পল্লবের নিবিড় ছায়ায়।
জাগো তবে অরণ্য কন্যারা। জাগো আজি,
মর্মরে মর্মরে ওঠে বাজি
বৃক্ষের বক্ষের বহ্নিজ্বালা
মেলি লেলিহান শিখা তোমরা জাগিয়া ওঠো বালা!
কঙ্কণে তুলিয়া ছন্দ তান
জাগাও মুমূর্ষু ধরা-প্রাণ
ফুলের ফসল আনো, খাদ্য আনো ক্ষুধার্তের লাগি
আত্মার আনন্দ আনো, আনো যারা রহিয়াছে জাগি
তিমির প্রহর ভরি অতন্দ্র নয়ন, তার তরে
ছড়াও প্রভাত আলো তোমাদের মুঠি ভরে ভরে।
(সংক্ষেপিত)
অতন্দ্র: ঘুমহীন।
বহ্নিজ্বালা: আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ার ইচ্ছা।
কঙ্কণ: চুড়ি।
ভয়ার্ত: ভয়াতুর।
ক্ষরিছে: করছে; চুয়ে চুয়ে পড়ছে।
মুমূর্ষু: মরে যাচ্ছে এমন।
ক্ষুধার্ত: ক্ষুধায় কাতর।
ম্লান: মলিন।
ধরা-প্রাণ: পৃথিবীর প্রাণী।
লেলিহান শিখা: ছড়িয়ে পড়তে চায় এমন আগুন।
পল্লব: গাছের কচি পাতা।
Read more